বাবা নেই, সংসার চালাতে বাদাম বিক্রি করছে মেধাবী ছাত্র মাইদুল

সমাজের অনেক মানুষ কষ্টে দিন পার করছে। কেউ কেউ দুই বেলা ভাত খেতে পাড়ছে না। তবে অনেকেই চাইলেই পারে দুঃখের সংসারে সুখ এনে দিতে।
এ বয়সে বইভর্তি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল ছোট্ট মাইদুল ইসলামের। তবে পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার তাড়নায় সেই কাঁধে বাদামের টুকরি বহন করছে সে। তার রোজগারেই চলে পাঁচ সদস্যের পরিবার। মাত্র ১০ বছর বয়সেই মাইদুল বইছে দায়িত্বের বড় ভার।
মাইদুল নীলফামারী সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুরী গ্রামের সরকার পাড়ার মৃত সামসুল ইসলামের বড় ছেলে। পরিবারে দুই ভাই, এক বোন, মা ও দাদি রয়েছেন। বাবা না থাকায় পরিবারের হাল ধরেছে মাইদুল। বাবা সামসুল ইসলাম চার বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।মাইদুল দুবাছুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিল বলেও জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে বাদাম বিক্রি করছে মাইদুল। জানতে চাইলে, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমার বাবা তিন-চার বছর আগে মারা গেছেন। পরিবার চালাতে আমাকে বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে সে বলে, ‘অনেকে আমার কাছ থেকে ইচ্ছা করে বাদাম কিনে ২/১ টাকা বেশি দেয়, আবার অনেকেই ঝামেলা মনে করে তাড়িয়ে দেয়।’
সে বলে, ‘বাড়িতে ছোট দুই ভাই-বোন, মা ও দাদি রয়েছে। সংসারের হাল ধরতে আমি ঘাড়ে বাদামের ডালি নিয়ে বাজারে বাজারে বাদাম বিক্রি করছি। পরিবারের খরচ যোগানোর মতো আর কেউ নেই। আমি একদিন বাদাম বিক্রি না করলে পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকবে। আমরা কোনোমতে অন্যের জমিতে ঘর বেঁধে বসবাস করছি, নিজস্ব জায়গা-জমি নেই। এখন মাও অসুস্থ, অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পারে না।
দাদি বৃদ্ধ তাই সব দায়িত্ব আমাকে বহন করতে হয়।’এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও পল্লী চিকিৎসক হামিদ বলেন, ‘ছেলেটির বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাদাম বিক্রি করে পরিবারের খরচ চালায়। সে একদিন বাদাম বিক্রি না করলে পরিবারের সদস্যদের পেটে ভাত যাবে না। আমরা প্রতিবেশীরা যে যতটুকু পারি সহযোগিতা করি।’